নজরানা প্রথা বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল যেমন-জাংগুয়ো তত্ত্ব অনুসারে চীন বিশ্বাস করতো যে-পৃথিবীতে মধ্যস্থলে তে অবস্থিত অর্থাৎ যে স্থানে স্বর্গের ছায়া পড়ে সেখানে ছিল চীন সাম্রাজ্য। এই বিশেষ অবস্থানের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত জাতি চীনের অধীনস্থ। এই ধারণা থেকে চিন্তা দুর্বল প্রতিবেশী যথা করিয়া ,এনাম ,থাইল্যান্ড, লুচু প্রভৃতি দেশকে নিয়ে গড়ে তুলেছিল জাতিসমূহের পরিবার। চীন মনে করত পদমর্যাদায় সে সর্বোচ্চ আর অন্যরা চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই আনুষ্ঠানিক আনুগত্যের বিনিময় প্রয়োজনীয় সময়ে রাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য করত। আনুগত্যের প্রমাণ হিসাবে নজরানা আদায় করত পরবর্তীকালে ইউরোপীয় বণিকরা চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের আবেদন জানালে এবং তার প্রচেষ্টা চালালে শেখানেও নজরানা প্রথা কার্যকারী হয়। আফিম যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ইউরোপীয় বণিকরা এই প্রথা মেনে চলে। পাশ্চাত্য দেশগুলো চীনে ব্যবসা করতে এলে
চীনের সম্রাট বছরে নির্দিষ্ট একটি দিনে তাদের কাছ থেকে নজরানা নিতেন। আসলে চীনের ধরনা ছিল সকল রাষ্ট্রের তার অধীন করদ রাষ্ট্র। তাই নজরানা দেওয়ার সময় প্রতিবেশী বা বিদেশে সকলকে চিনা দরবারে "কৌটাও" প্রথায় নতজানু হয়ে নজরানা দিতে হতো।
নজরানার পরিমাণ কত সময়ের ব্যবধানে পাঠাতে হবে এবং কোন পথ ধরে চীনে নজরানা আসবে এসব নির্ধারিত করতেন চিন সম্রাট তার দরবার থেকে। ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত ও বণিকেরা প্রথম দিকে নজরানা প্রথা ও কৌটাও রীতি মেনে নিলেও ক্যান্টন বাণিজ্যে আধিপত্য স্থাপন এরপর তারা তিন সম্রাটের কাছে এ অপমানজনক প্রথা উচ্ছেদের দাবি জানাই। বহু ইউরোপীয় বণিক এই প্রথা সক্রিয় বিরোধিতা করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো জাঙ্কট্রেড এর মাধ্যমে চীনে ব্যবসা চালাতে থাকে। নজরানা প্রথা ছিল অত্যন্ত সাপেক্ষ। তাই করদ রাষ্ট্রগুলি নজরানা প্রথা বহির্ভূত জাঙ্ক বাণিজ্যের সঙ্গে নিজেদের কে যুক্ত করে। তাই উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নজরনা প্রথার প্রয়োজনীয়তা কমে আসে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ এই প্রথা টিকিয় রাখতে চাইলে পাশ্চাত্য শক্তি বাধ্য হয়ে হাজার 1839 খ্রিস্টাব্দে শেষ পর্যন্ত চীনের সঙ্গে যুদ্ধে নামে। যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে নজরানা প্রথার চিরতরে অবসান ঘটে, সূচনা হয় সন্ধি ব্যবস্থার।